সফল মুমিনদের বৈশিষ্ঠ্য
এই দুনিয়াতে সফল হওয়ার জন্য আমরা কত উপায় খোজ করে থাকি কত মটিভেশনাল স্পিকার আমাদের কত উপায় বলে দেয় । কিন্তু দিন শেষে আমরা ব্যার্থতার গ্লানি নিয়েই ক্লান্ত হয়ে পড়ি । অথচ আমরা কি কখন দেখেছি যিনি সফলতা দেয়ার মালিক তিনি সফল হওয়ার জন্য আমাদের কি উপায় বলে দিয়েছেন ! আসুন আমরা এখন জানব সেই মহান রব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানহু তালা সফল হওয়ায় জন্য কী উপায় বলে দিয়েছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ মাজিদের সূরা আল – মু’মিনুনে সফল মুমিনদের ১১টি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে

১. সলাতে বিনয়ী হওয়া ।
আমরা যখন সালাতে দাড়াই তখন আমাদের মন এবং মনোযোগ এমন হতে হবে যেনো আমরা আল্লাহকে দেখছি অথবা আমরা না দেখলেও তিনি আমাদের দেখছেন ।
এবং সেই সালাতটি যেনো হয় একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য লোক দেখানোর জন্য নয় ।
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
‘যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ২]
২. অনর্থক কথা-বার্তা, কাজ-কর্মে লিপ্ত না হওয়া ।
আমরা যখন একে অপরের সাথে মিলিত হই তখন আমরা বিভিন্ন গল্প-গুজবে লিপ্ত হয়ে যাই । এবং কি অন্য মানুষদের গিবত পর্যন্ত করি অথচ সফল মুমিনদের বৈশিষ্ঠ্য কখনো এমন হতে পারে না । মুমিনের প্রত্যেকটি কথা-বার্তা, কাজ হবে কল্যাণময় যখন কথা বলবে ভালো ও সুন্দর কথা বলবে যখন কাজ করবে কল্যাণময় কাজ করবে ।
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
‘যারা অনর্থক কথা-বার্তা, কাজ-কর্মে নির্লিপ্ত।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৩]
৩. যাকাত দানকারী ।
যাকাত ইসলামের ৫টি রুকুনের মধ্যে অন্যতম এই যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দারিদ্রতা দূর হবে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন এটিকে ফরজ করেছেন কুরআন আল কারীমে অনেক জায়গায় এর সম্পর্কে বলা হয়েছে।
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
‘যারা জাকাত প্রদান করে থাকে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৪]
৪. যে অবৈধ সম্পর্ক থেকে নিজের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
একজন মুমিন কখনো বৈধ পন্থা ছাড়া যৌন চাহিদা চরিতার্থ করতে পারে না এবং কি আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেছেন এর ধারে কাছেও যেও না । আমরা বিয়ের মাধ্যমে আমদের চরিত্র ও ঈমানকে হেফযত করব । রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী।
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৫]
৫. আমানত রক্ষাকারী ।
মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমানত রক্ষা করা । কোনও একজন মানুষ যদি কোনও মুমিন ব্যক্তির কাছে আমানত রেখে যায় তার কর্তব্য হচ্ছে সেটিকে অত্যান্ত দ্বায়িত্বের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা । আল্লাহর রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহিস সালামের জীবনের দিকে আমরা খেয়াল করলে দেখা যায় তিনি এই রকম আমানতদ্বার ছিলেন যে তার বিরুধিতা কারিরাও তার কাছে আমানত রাখতেন ।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
‘যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৮]
৬. সালাতের প্রতি যত্নবান ।
সালাত হচ্ছে দ্বীনের অন্যতম খুঁটি । রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন সালাত জান্নাতের ছাবি । হাদিসে আসছে ইচ্ছে করে সালাত ছেড়ে দেয়া কুফুরির সামিল ।
তাই একজন সফল মুমিন হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সালাতের ব্যপারে মনযোগI হতে হবে ।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
‘যারা তাদের সালাতসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৯]
৭. রবের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকা ।
আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ভয় অন্তরে লালন করা একজন সফল মুমিনের আবশ্যকীয় বৈশিষ্ঠ্য । আল্লাহর ভয় ছাড়া একজন মানুষ কখনো মুমিন হতে পারে না । যারা আল্লাহকে ভয় করে তারাই সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে। তাদেরকে কেউ কোনো ধরনের প্ররোচোনা দিয়ে কিংবা লালসায় পেলে পথভ্রষ্ট করতে পারে না ।
إِنَّ الَّذِينَ هُم مِّنْ خَشْيَةِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ
‘যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৫৭]
৮. আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাসী ।
এই পিথিবী আল্লাহ সুবহানহু তালার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে যে গুলো মুমিন হিসেবে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে ।
وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ
‘যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৫৮]
৯. শিরক করা থেকে মুক্ত থাকা ।
শিরক হচ্ছে ঈমানের বিপরীত । আল্লাহ রব্বুল আলামিন শিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। শিরককারী ব্যক্তির কোনো আমল আল্লাহ রব্বু আলামিনের কাছে কবুল হবেনা যতক্ষণ না শিরক ছেড়ে তাওবা করে তাই একজন মুমিনকে অবশ্যই শিরক থেকে মুক্ত থাকতে হবে ।
وَالَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ
‘যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৫৯]
১০. ভীত-সন্ত্রস্তচিত্তে দানকারী
দান-সাদাকাহ করা মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য । গোপন দান আল্লাহর রাগকে কমিয়ে দেয় তাই যারা আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে বিশ্বাস করে তাদেরকে অবশ্যই দান করতে হবে । মদিনায় সবছেয়ে গরিব সাহাবী ছিলেন হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহিস সালাম তাকেও দান করতে নির্দেশ দিয়েছেন ।
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ
‘যারা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৬০]
১১. কল্যাণজনক কাজে অগ্রগামী
একজন মুমিন যে রকম অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকে তেমনি কল্যাণকর কাজে থাকে অগ্রগামী । মুমিনদের কাছ থেকে কেবল কল্যাণই আসা করা হয় ।
أُوْلَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ
‘তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ৬১]
এই সমস্ত গুণাবলি যারা অর্জন করবে, তারাই সফল হবে এবং তাদের জন্য কী পুরস্কার থাকছে, মহান আল্লাহ বলছেন :
أُوْلَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ – الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘তারাই উত্তরাধিকারী। শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে তারা। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।’ [সুরা মুমিনুন, ২৩ : ১১]